বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় | নবম-দশম শ্রেণী | অধ্যায়-০৭ | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর-০২

Table of Contents
বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় | নবম-দশম শ্রেণী | অধ্যায়-০৭ | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর-০২

∎ প্রশ্ন ০২: বেল্লাল হোসেন তার এলাকার জনপ্রতিনিধি। তার দপ্তরে ১২ জন প্রতিনিধি রয়েছে। তিনি তার এলাকায় ৩টি নলকূপ ও টয়লেট (পায়খানা) স্থাপনের জন্য ৫টি রিং প্লাব সরবরাহ করেন। এছাড়া তিনি কৃষকদের কাছে সার বিতরণ করেন।
 
ক. সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুসারে জাতীয় সংসদের সদস্য সংখ্যা কত?
খ. স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন বলতে কী বোঝায়?
গ. বেল্লাল হোসেন কোন স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. অনুচ্ছেদে উল্লেখিত বেল্লাল হোসেনের কাজ উক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য যথেষ্ট কি? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

নং প্রশ্নের উত্তর 

ক. সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুসারে জাতীয় সংসদের সদস্য হচ্ছে ৩৫০ জন।

খ. স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন বলতে নির্দিষ্ট এলাকাভিত্তিক জনগণের স্বশাসনকে বোঝায়। সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা তা পরিচালিত হয় এবং ওই জনগণের নিকট তা দায়িত্বশীল থাকে। বাংলাদেশের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে— ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন ।

গ. বেল্লাল হোসেন তার এলাকার ভোটার কর্তৃক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তার দপ্তরে আরও ১২ জন প্রতিনিধি রয়েছে। অতএব, বেল্লাল হোসেন যে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান তা হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ। ১৯৯৭ সালে স্থানীয় সরকার সংশোধিত আইনের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদ গঠনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয় । গড়ে ১০-১৫টি গ্রাম নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত। এখানে নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছাড়াও নয়জন নির্বাচিত সাধারণ সদস্য এবং সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে তিন জন সদস্য থাকেন। সংশোধিত আইনে ওয়ার্ড সংখ্যা নয়টিতে উন্নীত করা হয়েছে। প্রত্যেক ওয়ার্ড থেকে একজন করে নয়টি ওয়ার্ড থেকে নয় জন সাধারণ সদস্য জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হচ্ছেন। আর মহিলা সদস্যগণ প্রতি ওয়ার্ড থেকে একজনের ভিত্তিতে পুরুষ ও মহিলা সকলের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। এ পরিষদের কার্যকাল পাঁচ বছর।

ঘ. ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে বেল্লাল হোসেন তার এলাকায় তিনটি নলকূপ স্থাপন, টয়লেট স্থাপনের জন্য পাঁচটি রিং স্নাব সরবরাহ এবং কৃষকদের কাছে সার বিতরণ করেন। বেল্লাল হোসেন এর এ কাজ ইউনিয়ন পরিষদের জন্য যথেষ্ট নয়। কেননা ইউনিয়ন পরিষদের কাজের একটা ব্যাপকতা রয়েছে যা নিম্নরূপ :
  1. জনশৃঙ্খলা রক্ষা : গ্রামে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা ইউনিয়ন পরিষদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনের জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে কিছু চৌকিদার ও দফাদার নিয়োগ করা, অপরাধ, বিশৃঙ্খলা ও চোরাচালান বন্ধের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ, ঝগড়া-বিবাদ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা নিরসনে ভূমিকা পালন, গ্রাম আদালত সম্পর্কিত দায়িত্ব সম্পাদন, পারিবারিক বিরোধের আপস-মীমাংসার উদ্যোগ গ্রহণ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  2. জনকল্যাণমূলক কাজ ও সেবা : ইউনিয়নে অবস্থিত কৃষি, স্বাস্থ্য, মৎস্য, পশুপালন ও শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি সংস্থার সেবা ও কার্যক্রম সম্বন্ধে জনগণকে অবহিতকরণ এবং গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্থার কর্মসূচির অধীনে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, স্যানিটেশন, পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন, আত্মকর্মসংস্থান ও আর্থসামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা ইউনিয়ন পরিষদের প্রধানতম কার্যাবলির মধ্যে পড়ে।
  3. স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কিত পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন : এলাকার কৃষি উন্নয়নের জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, গ্রামীণ শিল্পের উন্নয়ন সাধন, বাজার সৃষ্টি, মৎস্য চাষ ও পশুপালনের উন্নত পদ্ধতি সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিতকরণ, উন্নত বীজ, চারা ও সার বিতরণের সুষ্ঠু ব্যবস্থা সৃষ্টি করা, জনগণের আয় বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রমে পরামর্শ প্রদান, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বাঁধ নির্মাণ প্রভৃতি কাজ ইউনিয়ন পরিষদ সম্পাদন করে । 
  4. প্রশাসনিক কাজ : সচিব, গ্রাম পুলিশ ও পরিষদের অন্যান্য কর্মচারীদের পরিচালনা, তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ করা, সকল সভা আহ্বান, বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রণয়ন ও প্রেরণ করা, কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব পালন ইত্যাদিও ইউনিয়ন পরিষদ করে থাকে।