কিডনি কি?
বৃক্ক বা কিডনি (ইংরেজি: Kidney) হচ্ছে মেরুদণ্ডী প্রাণিদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিডনি দেহের রেচন তন্ত্রের প্রধান অংশ। মানব দেহের অভ্যন্তরভাগে উদর গহ্বরের পশ্চাৎভাগে মেরুদণ্ডের দুই পাশে দুটি বৃক্ক বা কিডনি অবস্থিত। বৃক্ক বা কিডনির দৈর্ঘ্য ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি। এটি দেখতে আকারে অনেকটা শিমের বিচির মতো। কিডনির রং খানিকটা লালচে বাদামী। প্রতিটি বৃক্ক বা কিডনি স্বচ্ছ ও পাতলা পেরিটোনিয়াম ঝিল্লি দ্বারা আবৃত থাকে। এর ভেতর দিয়ে ইউরেটার ও রেনাল শিরা বের হয় এবং রেনাল ধমনী ও স্নায়ূ বৃক্কে প্রবেশ করে। যকৃতের অবস্থানের কারণে ডান বৃক্ক বাম বৃক্ক অপেক্ষা সামান্য নিচে থাকে।
কিডনির কাজ কি?
কিডনির প্রধান কাজ রক্ত ছেঁকে বর্জ্য পদার্থ (যেমন ইউরিয়া) পৃথকীকরণ ও মূত্র উৎপাদন। আমাদের দেহের সমুদয় রক্ত দিনে প্রায় ৪০ বার বৃক্কের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়াও দেহে পানি ও তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ বা ইলেকট্রোলাইট যেমন সোডিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদির ভারসাম্য বজায় রাখে। এছাড়া এটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসাবে হরমোন নিঃসরণ করে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।কিডনি নষ্ট হওয়ার কারণ
নানা কারণে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত বা স্থায়ীভাবে বিকল হয়ে থাকে। গবেষণায় জানা গেছে, প্রায় ১০-৩০ শতাংশ বা আরো বেশি কিডনি বিকল হয় নেফ্রাইটিসের কারণে। ২০-৩০ শতাংশ ডায়াবেটিসের কারণে
এবং ১০-২০ শতাংশ কিডনি বিকল হয় উচ্চ রক্তচাপের কারণে। এছাড়া বংশগত কারণে, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাল সংক্রমণের কারণে, কিডনিতে পাথর হলে, অস্বাস্থ্যকর ডায়েটে এবং ব্যাথানাশক ঔষধের প্রভাবেও কিডনিজনিত রোগ হতে পারে।
ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপকে বর্তমানে কিডনি রোগের প্রধান ঝুঁকির কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় থাকে। হার্ট ও মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহে ব্যাঘাত সৃষ্টি, হঠাৎ কিডনি অকেজো হওয়া, স্থুলতা এবং অন্যান্য সংক্রামক রোগের কারণেও কিডনি রোগ হয়ে থাকে। এছাড়া ধূমপায়ী এবং ষাটোর্ধ্ব বয়সীদের কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
প্রস্রাব আটকে রাখা, পর্যাপ্ত পানি পান না করা, অতিরিক্ত শারীরিক শ্রম, বেশি বেশি প্রোটিন খাওয়া, বেশি বেশি লবণ খাওয়া, কোমল পানীয় পান করা, কম ঘুমানো ইত্যাদি ও কিডনি রোগের কারণ।
কিডনি রোগের লক্ষণ
প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগের তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। ধীরে ধীরে কিডনির কার্যক্রম ক্ষমতা কমতে থাকলে লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে। কিডনি রোগের কিছু লক্ষণ হলো -
১. সব সময় ক্লান্ত লাগা।
২. পা ফুলে যাওয়া।
৩. পিঠের পাশে নিচের দিকে ব্যথা হওয়া।
৪. বমি বমি ভাব।
৫. ত্বকে র্যাশ হওয়া।
৬. প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া। ইত্যাদি।
কিডনি ভালো রাখার উপায়
১. পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করুন।
২. অতিরিক্ত কোমল পানীয়, কফি, চা পান করা থেকে বিরত থাকুন।
৩. ধূমপান ত্যাগ করুন।
৪. পেইন কিলার খাওয়ার অভ্যাস থাকলে আজই তা ত্যাগ করুন।
৫. অতিরিক্ত লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৬. প্রস্রাব আটকে রাখবেন না।
৭. সব সময় মাংস না খেয়ে মাছ-শাকসবজি খান।
৮. রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় রাখার চেষ্টা করুন।
৯. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
১০. প্রয়োজনের বেশি ভিটামিন সি খাওয়া যাবে না।
১১. প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানোর অভ্যাস করুন।
১২. নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করুন।