A+
A-

হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর স্ত্রীদের নাম

নবীজির স্ত্রীদের নাম, নবীজির স্ত্রীদের নাম ও বয়স, নবীজির স্ত্রীদের নাম কি, নবীজির স্ত্রীদের নামের তালিকা, নবীজির স্ত্রীদের নবীজীর স্ত্রীগণের নাম, নবীজির স্ত্রীদের নাম কি কি


মহানবী (সাঃ) হযরত খাদীজা (রাঃ) এর জীবদ্দশায় অন্য কোন মহিলা কে বিবাহ করেন নাই। হিযরতের তিন বৎসর পূর্বে যখন হযরত খাদিজা (রাঃ) ইন্তিকাল করেন। এবং মহানবী (সাঃ) এর বয়স উনপঞ্চাশ বৎসরে পৌঁছল, তখন আরও কয়েকজন সচ্ছরিত্রা মহিলা তাঁর সাথে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন। যাদের পবিত্র নাম নিম্নে বর্নিত হল -

নবীজির স্ত্রীদের নামের তালিকা

১। হযরত খাদীজা (রাঃ)
২। হযরত সাওদা বিনতে যামআহ্ (রাঃ)
৩। হযরত আয়েশা (রাঃ)
৪। হযরত হাফসা (রাঃ)
৫। হযরত যয়নাব বিনতে খুযাইমা (রাঃ)
৬। হযরত উম্মে ছালমা (রাঃ)
৭। হযরত যায়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ)
৮। হযরত জুওয়াই রিয়াহ্ (রাঃ)
৯। হযরত উম্মে হাবীবা (রাঃ)
১০। হযরত সুফিয়া (রাঃ)
১১। হযরত মাইমুনা (রাঃ)

তারা মোট এগার জন। যাঁদের মধ্যে দুইজন মহানবী (সাঃ) এর পূর্বে ইনতিকাল করেছেন এবং নয়জন তাঁর ওফাতের সময় জীবিত ছিলেন। তা উম্মতের ঐক্য মতে শুধু মহানবী (সাঃ) এর অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিল। উম্মতে মুহাম্মদী এর জন্য চার জন থেকে বেশী স্ত্রী একই সময় বিবাহে আবদ্ধ করা বৈধ নয়।

নবীজির স্ত্রীদের নাম ও পরিচয়

হযরত সাওদা (রাঃ) : তিনি প্রথমে সাকরান ইবনে আমেরের বিবাহে আবদ্ধ ছিলেন। অতঃপর মহানবী (সাঃ) এর সাথে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন।

হযরত আয়েশা (রাঃ) : তিনি হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) এর কন্যা। ছয় বৎসর বয়সে মহানবী (সাঃ) এর সাথে বিবাহ হয় এবং প্রথম হিজরী সনের নয় বৎসর বয়সে তাঁর রুখসতী (স্বামীর বাড়ীতে উঠাইয়া নেওয়া) কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। মহানবী (সাঃ) এর ওফাতের সময় তাঁর আঠার বৎসর বয়স ছিল। মহানবী (সাঃ) এর নয় বৎসর সাহচর্য তাঁর উপর কি প্রভাব বিস্তার করেছিল এবং তিনি কি অর্জন করেছিলেন, তা মহান সাহাবী গণের উক্তি থেকে অনুধাবন করা যায়। সাহাবী গণ বলতেন, "যখন কোন মাসয়ালা আমাদের সন্দেহ সৃষ্টি হত, তখন আমরা হযরত আয়েশা সিদ্দীকার নিকট সমাধান পেতাম"। এই কারণে প্রসিদ্ধ সাহাবীগণের অনেকেই তাঁর শিষ্য ছিলেন।

হযরত হাফসা (রাঃ) : তিনি হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) এর কন্যা ছিলেন। প্রথমে উনাইস ইবনে হুযাইফার সাথে তাঁর বিবাহ হয়। অতঃপর হিজরী দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় সনে মহানবী (সাঃ) এর সাথে বিবাহ হয়।

হযরত যয়নাব বিনতে খোযায়মা (রাঃ) : তিনি উম্মুল মাসাকীন (মিসকিনদের মা) নামে পরিচিত ছিলেন। প্রথমত তুফায়েল ইবনে হারেসের সাথে পরিনয়সূত্রে আবদ্ধ হন তিনি তাঁকে তালাক দিলে পরে তাঁর ভাই উবায়দুল্লাহর সাথে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন। তিনি যখন উহুদ যুদ্দে ১মাস পূর্বে শহীদ হয়ে যান তখন হিজরী তৃতীয় সনে উহুদ যুদ্ধের এক মাস পূর্বে মহানবী (সাঃ) এর সাথে তার বিবাহ হয়। এবং মাত্র দুই মাস ঘর সংসার করার পর ইন্তিকাল করেন।

হযরত উম্মে হাবীবা (রাঃ): তিনি হযরত আবু সুফিয়ান (রাঃ) এর কন্যা। প্রথমে উবায়দুল্লাহ ইবনে জাহাশের সাথে বিবাহ হয়। উবায়দুল্লাহর তরফ থেকে সন্তানাদিও হয়। তাঁরা স্বামী স্ত্রী দুইজনই মুসলমান হয়ে হাবশায় হিযরত করে ছিলেন। সেখানে পৌঁছে উবায়দুল্লাহ খ্রীষ্টান হয়ে যায় এবং উম্মে হাবীবা নিজ ঈমান আকীদার উপর অটল থাকেন। সে সময় মহানবী (সাঃ) হাবশার বাদশাহকে একটি পত্র লিখে পাঠালেন যে, মহানবী (সাঃ) এর পক্ষ হতে উম্মে হাবীবাকে যেন বিবাহের প্রস্তাব দেন। সুতরাং নাজ্জাসী বিবাহের প্রস্তাব দেন এবং নিজেই বিবাহের অভিভাবক হয়ে চারশত দীনার মহরানা নিজেই আদায় করে দেন।

হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) : হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) এর নাম ছিল হিন্দা। প্রথমে আবু সালমার বিবাহে ছিলেন। তাঁর পক্ষ হতে সন্তানও ছিল। হিজরতের চতুর্থ বর্ষে এবং কোন বর্ণনায় তৃতীয় বর্ষে জুমাদাস্ সানী মাসে মহানবী (সাঃ) এর বিবাহে আসেন। বলা হয়ে থাকে যে, হযরত উম্মে সাল্মা (রাঃ) সমস্ত পবিত্রতমা বিবিগণের পরে ইনতিকাল করেছিলেন।

হযরত যয়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) : ইনি মহানবী (সাঃ) এর ফুফুর কন্যা ছিলেন, মহানবী (সাঃ) তাঁকে যায়েদ ইবনে হারেসার নিকট বিবাহ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যায়েদ যেহেতু গোলাম ছিলেন এজন্য যয়নাব (রাঃ) এই সম্বন্ধ পছন্দ করলেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মহানবী (সাঃ) এর হুকুম পালনার্থে রাজী হয়েছিলেন। এক বৎসরের কাছাকাছী হযরত যায়েদের বিবাহধীনে ছিলেন। কিন্তু যেহেতু মানসিক বনিবনা হচ্ছিলনা তাই সব সময় তাদের মধ্যে মনমালিন্য লেগেই থাকত। এমন কি হযরত যায়েদ (রঃ) হুজুর (সাঃ) খেদমতে হাজির হয়ে তালাক দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করতে লাগলেন। তিনি তাঁকে বুঝিয়ে তালাক প্রদান হইতে বিরত রাখেন। কিন্তু তারপরেও যখন কিছুতেই বনিবনা হচ্ছিলনা, তখন হযরত যায়েদ (রাঃ) বাধ্য হয়ে তাকে তালাক প্রদান করেন। তিনি যখন মুক্ত হলেন, তখন মহানবী (সাঃ) তাঁর শান্তনা ও মন সন্তুস্টির জন্য তাঁকে বিবাহ করতে চাইলেন। কিন্তু সে সময় আরবে পালক পুত্রকে নিজের ঔরষজাত পুত্র সন্তানের বরাবর মনে করা হত। সে জন্য মহানবী (সাঃ) সাধারণ মানুষের প্রতি লক্ষ্য করে তাকে বিবাহ করা হতে বিরত ছিলেন। লোকেরা হয়তো এই কথা বলবে যে, মুহাম্মদ (সাঃ) পুত্র বধুকে বিবাহ করে ফেলেছেন। কিন্তু যেহেতু তাকে বিলুপ্ত করে দেওয়া ইসলামের অপরিহার্য দায়িত্ব। এজন্য কুরআনের আয়াত নাযিল হল: "আপনি কি লোক দিগকে ভয় করছেন? অথচ আল্লাহকেই একমাত্র ভয় করা উচিত"। -(সূরা আহযাব)

চতুর্থ হিজরী অথবা কোন কোন বর্ণনা অনুযায়ী তৃতীয় হিজরীতে আল্লাহর হুকুমে মহানবী (সাঃ) স্বয়ং তাঁকে বিবাহ করেন। যেন মানুষ বুঝতে পারেন যে, পালক পুত্র ঔরষজাত পুত্রের হুকুম বা পর্যায় নয়। পালক পুত্রের বিবি বিবাহ বিচ্ছেদের পর পালক পিতার জন্য হারাম নয় 'এবং যে সব লোকেরা আল্লাহর এই হালালকে বিশ্বাস গত বা আমল গত হারাম করে রেখেছে তারা যেন আগামীতে এই ভুল ধারণা থেকে বাহির হয়ে আসে। এ জাহেলীয়াতের কুপ্রথা সমূলে উৎপাটিত হয়ে যায়। কিন্তু এই প্রাচীন কুপ্রথার উৎপাটন তখনই সম্ভব ছিল যখন মহানবী (সাঃ) স্বয়ং কার্যতঃ ইহা বাস্তবায়ন করেন।

হযরত সুফিয়া (রাঃ) : তিনি হযরত হারুন (আঃ) এর বংশধর। এ শুধু তাঁরই বৈশিষ্ট ছিল যে, তিনি একজন নবীর কন্যা এবং একজন নবীর বিবি ছিলেন। প্রথমে কেনানা ইবনে আবিল হাকীকের বিবাহে আবদ্ধ ছিলেন। মৃত্যুর পরে মহানবী (সাঃ) এর বিবাহে আসেন।

হযরত জুওয়াইরিয়া (রাঃ) : তিনি বনি মুস্তালেকের সরদার হারেসের কন্যা। যুদ্ধবন্দী অবস্থায় মহানবী (সাঃ) এর খেদমতে আসেন। অতঃপর মহানবী (সাঃ) তাঁকে বিবাহ করেন। ইহার বদলায় তাঁর গোত্রের সমস্ত লোক মুক্তি লাভ করে এবং তাঁর পিতা মুসলমান হয়ে যান।

হযরত মায়মুনা (রাঃ) : প্রথমে মাসউদ ইবনে ওমরের বিবাহে আবদ্ধ ছিলেন। তিনি তাঁকে তালাক প্রদান করার পর আবু রেহাম তাঁকে বিবাহ করেন। আবু রেহামের ইন্তিকালের পরে মহানবী (সাঃ) তাকে বিবাহ করেন। ইনি মহানবী (সাঃ) এর সর্বশেষ বিবি ছিলেন। তাঁর পর তিনি আর কোন বিবাহ করেন নাই। 

উল্লেখিত বিবিগণ ছাড়াও আরো কোন কোন মহিলাগণের সাথে মহানবী (সাঃ) এর বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের সাথে হুজুর (সাঃ) এর সম্মনিত সাহচর্য লাভ হয় নাই। বরং রুখসতী কোন কারণে বিচ্ছেদ ঘটেছিল। বিবরণ সীরাতের বড় বড় কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।

তথ্যসূত্র; 
সীরাতে খাতামুল আম্বিয়া
মুফতী মোহাম্মাদ শফি (রাহঃ)
নাদিয়াতুল কুরআন প্রকাশনী

Comments

Previous Post Next Post